অবশেষে দীর্ঘ ১১মাস র্মগে থাকার পর প্রবাসীদের চাঁদার টাকায় দেশে আসছে হতবাকা প্রবাসী ইমরানের লাশ!


অনেকেই বিভিন্ন কারণে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছে। তেমনি ইমরান খান বিদেশে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালের আগস্টে ভূমধ্যসাগরে ইউরোপে যাওয়ার পথে তিনি মারা যান এবং তার মৃতদেহটি এখনও রয়েছে মাল্টা মর্গে!দীর্ঘদিন পর আগামী শুক্রবার (২৮ জুন) সকাল ১১ টায় স্থানীয় পাওলা (মাল্টা ) জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে তার প্রথম জানাযা।

পরে বিকাল ৩ টায় লাশবাহী বিমানের মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে বাংলাদেশী প্রবাসীরা ও মাল্টা আওয়ালী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউসার ফজলু (আপেল আমিন মৃতদেহ পাঠানোর চেষ্টা করবেন বলে জানান!টকবগে যুবক ইমরান খান ওরফে সুজন। চোখে-মুখে স্বপ্ন ছিল ইউরোপে যাবেন, সেখানে গিয়ে ভালো আয় রোজগারের মাধ্যমে পরিবারের হাল ধরে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ হবে। কিন্তু সেই স্বপ্ন

তার পূরণ হয়নি। দালালের প্রলোভনে তাকে লাশ হয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে। ইতালি থেকে নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার সময় অনেকের সঙ্গে ইমরানেরও করুণভাবে মৃত্যু হয়। ঘটনাটি ১১ মাস আগের। সেই ইমরানের লাশ আগামী শনিবার দেশে আসছে। মাল্টার একটি সরকারি মর্গ থেকে লাশটি আনা হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বজনরা।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হতভাগ্য যুবক ইমরানের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার কেদারপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল মান্নান খান। ইতালি থেকে ইমরান

নৌকায় ওঠার পর পরিবার ধরেই নিয়েছিল, সে ইউরোপে পৌঁছেছে। কিন্তু বাবা-মায়ের সেই স্বপ্ন মাটি হয়ে গেছে। যে ছেলেকে জীবিত পাঠিয়েছিলেন শনিবার তারাই তার নিথর দেহ গ্রহণ করবেন। ইমানের মৃত্যুর তিন মাস পর খবর পায় তার পরিবার। এর আগে তারা ভেবেছিল ইমরান হয়তো বেঁচে আছে। একপর্যায় জানতে পারেন ইমরান আর নেই। ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।ইমরানের পরিবার ও ইতালি প্রবাসীরা জানান, ২০১৮ সালের শুরুর দিকে দালালের মাধ্যমে ইউরোপের উদ্দেশ্যে প্রথমে লিবিয়ায় যান

ইমরান খান। সেখানে আট মাস থেকে ১৬ আগস্ট ছোট একটি নৌকায় করে ইউরোপের উদ্দেশ্যে ৮৪ জন পাড়ি জমান। কিন্তু পথিমধ্যে পাঁচদিন পর তাদের ইঞ্জিনচালিত নৌকার তেল, সঙ্গে থাকা পানি ও খাবার ফুরিয়ে যায়। দুদিন পর অন্যদের সঙ্গে ইমরানও তৃষ্ণায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এক সময় নৌকাতেই মারা যান। তাদের বহনকারী নৌকাটি মাল্টায় পৌঁছালে জীবিত থাকা শ্রমিকদের উদ্ধার করে দেশটির কোস্ট গার্ডের সদস্যরা।এরপর ইমরানের লাশটি উদ্ধার করে একটি সরকারি মর্গে রাখা হয়। সেই সময় তার লাশটি দেশে সেখানকার প্রবাসীরা শনাক্ত এবং তার স্বজনদের খুঁজে বের করেন। ইতালি প্রবাসী তার বোনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। পরবর্তীতে ইমরানের লাশটি আনা ব্যয়বহুল জেনে স্বজনরা লাশটি দেশে নিতে অনীহা প্রকাশ করেন। শেষে প্রবাসীরা সাহায্য তুলে সম্প্রতি তার লাশটি দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেছে। মাল্টা প্রবাসী বাঙালিরা জানান, ইমরানের লাশ দ্রুতই দেশে আনা সম্ভব হতো। কিন্তু দেশটিতে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। ফলে সেখান থেকে যে কারও লাশ পাঠানো জটিল পড়ে পড়ে। মাল্টার সব কার্যক্রম গ্রিস থেকে পরিচালিত করে বাংলাদেশ।ইমরানের বাবা আবুল মান্নানের অভিযোগ, দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ইমরান ছিলেন সবার বড়। তাকে নিয়ে তার বাবার অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নগুলো এখন মাটি হয়ে গেল। যারা তাকে প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপ পাঠানোর নাম করে নৌকায় তুলেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান তিনি।প্রসঙ্গত, শুধু ইমরান খান নয়, তার মতো হাজারো বেকার যুবক পাড়ি দিচ্ছে এ ভয়ঙ্কর পথ। কিন্তু এ পথ যে মোটেও সহজ নয়, তা তারা হয়তো জেনে পাড়ি দিচ্ছেন আবার অনেকেই না জেনে দিচ্ছেন।ইউরোস্টারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে প্রতি বছর ইউরোপে ঢুকছে প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশি। যাদের বড় একটি অংশ এই নৌকা ডুবে মাঝ সাগরে প্রাণ হারান। পরে তাদের মরদেহ নিয়ে বিভিন্ন দেশে জটিলতা তৈরি হয়। অনেকের সন্ধান জানা গেলেও খরচের কারণে তাদের পরিবার মরদেহ দেশে নিতে অস্বীকৃতি জানান।